এক মাসেই সড়কে ঝরলো ৪১৮ প্রাণ: সড়ক নিরাপত্তায় নীতির প্রয়োগ চাই।

- আপডেট সময়ঃ ০১:১৪:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- / ৮৭ বার পড়া হয়েছে।

জুলাই মাসের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান আবারও দেশের সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির করুণ চিত্র সামনে এনেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ মাসেই ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৮৫৬ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য, যা এ সংকটের সামাজিক মাত্রাকেও স্পষ্ট করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই মৃত্যুর বড় অংশীদার। জুলাই মাসে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশের বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পথচারীদের মৃত্যু, চালক ও সহকারীদের প্রাণহানি-যা সামগ্রিক সড়ক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। শুধু সড়ক নয়, নৌ ও রেল দুর্ঘটনাও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো চিহ্নিত হয়েছে-ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, দক্ষ চালকের অভাব, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও গণপরিবহন খাতে অনিয়ম-এসব নতুন নয়। বহুদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা এসব কারণ তুলে ধরছেন, কিন্তু বাস্তবে কার্যকর উদ্যোগের অভাব প্রকট। দুর্ঘটনা কমাতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন যে সুপারিশ করেছে, তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যে নীতি পর্যায়ে আলোচিত। যেমন দক্ষ চালক তৈরি, ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, মহাসড়কে আলাদা সার্ভিস রোড নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, এমনকি সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রয়োগ। প্রশ্ন হচ্ছে-এসব কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বাস্তবায়নে বাধা কোথায়? অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবহন খাতে প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর চাপ এবং আইন প্রয়োগে শিথিলতা-এসব কারণে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি, সামাজিক বেদনা ও মানবিক সংকট তৈরি হয়, তার পরিমাণ কোনো পরিসংখ্যানেই ধরা পড়ে না। এখন সময় হয়েছে দায়সারা পরিসংখ্যান প্রকাশের বাইরে গিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের। দুর্ঘটনা রোধের মূল চাবিকাঠি হলো কার্যকর নীতি বাস্তবায়ন, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং পরিবহন খাতের অনিয়মে রাজনৈতিক ছায়া কমানো। অন্যথায় প্রতিমাসে নতুন পরিসংখ্যান আসবে, প্রাণ হারাবে শত শত মানুষ, আর সড়ক থাকবে মৃত্যুফাঁদ হিসেবেই।