হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত হন সাজু মিয়া।

- আপডেট সময়ঃ ০৭:৪২:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নের ডেমিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তজম আলী মিয়ার পুত্র সাজু মিয়া (২০)। গত ১১ মে বিকালে বাড়ির পাশে গোসল করার সময় বৃষ্টিসহ বজ্রপাত শুরু হলে সেখানেই বজ্রপাতে নিহত হন সাজু।ছেলের আকস্মিক এমন মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান তজম আলীর পুরো পরিবার। যে ছেলেকে বিশ বছরে এত কষ্টে লালন পালন করে বড় করেছিলেন বজ্রপাতে তার এমন মৃত্যুপরিবারটিকে যেন শোকে স্তব্দ করে দিয়েছে।তজম আলী মিয়া জানান, সাজু বাড়ির পিছনে গোসল সেরে আসার সময় বজ্রপাত শুরু হয়। তখন সে বজ্রপাতের কবলে পড়ে। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন,’আমার এমন তরতাজা ছেলে এভাবে চলে যাবে কোনদিনই ভাবিনি।”শুধু সাজু মিয়াই নন বিগত পাঁচ বছরে হাওড়ে ধানকাটা, বাড়ির পাশে জমিতে কাজ করা, পুকুরে মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজে থাকাকালীন সময়ে বজ্রপাতে আজমিরীগঞ্জ উপজেলাসহ জেলায় বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮১ জন। এদের মধ্যে ৫৫ জনই কৃষক আর সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষ।এই অবস্থায় উপজেলার হাওর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ জীবিকার তাগিদে হাওর, নদী ও হাওড়ের বিভিন্নস্থানে যেতেই এখন ভয় পাচ্ছেন।বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় ২০২১-২২ অর্থবছরে হবিগঞ্জ জেলাসহ সারাদেশের ১৫ জেলায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩৫টি ‘লাইটনিং এরেস্টার’ (বজ্র নিরোধক যন্ত্র) স্থাপন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়।
জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উক্ত প্রকল্পের আওতায় হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নে একটি করে মোট ছয়টি, জেলার বানিয়াচংয়ে সাতটি, নবীগঞ্জে ছয়টি, বাহুবলে দুইটি, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় তিনটি, লাখাইয়ে তিনটি, চুনারুঘাটে দুইটি শায়েস্তাগঞ্জে দুইটি এবং মাধবপুরে দুইটিসহ নয়টি উপজেলায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয় ৩৩টি বজ্রনিরোধক দন্ড।কিন্তু যেসব জায়গায় এই এরেস্টার বসানো হয়েছে, তা নিয়ে শুরু থেকেই ছিল নানা বিতর্ক। তবে অনেকেই ভয়ে মুখ খুলেননি।আর সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বলছেন, লাইটনিং এরেষ্টার গুলো বজ্রনিরোধ করে কিনা সেটি তারা ষঠিক জানেন না।সরজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের পুকুর পাড়ে একটি, শিবপাশা ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন একটি, জলসুখা বাজারে একটি, কাকাইলছেও বাজারে একটি, সদর ইউনিয়নের পাঁচ ক্ষেরের পতিতে একটি বদলপুরে একটিসহ মোট ছয়টি লাইটনিং এরেষ্টার বসানো রয়েছে। এসময় স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এগুলো আসলে কোন কাজ করে কিনা সেটি আসলে কারোরই জানা নেই।
কাকাইলছেও ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান বলেন, বজ্রনিরোধের জন্য কয়েক বছর আগে বাজারের পাশে এটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু আদৌ এটি কোন কাজ করে কিনা সেটি আসলে কেউই জানেনা। মাস তিনেক আগে মালবাহী গাড়ির ধাক্কায় এটি ভেংগে যায়। এখন পর্যন্ত এটি ভাংগা অবস্থাই রয়েছে।শিবপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা কাওছার মিয়া জানান, গত মাসে হাওড়ে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দুই ধানকাটার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এগুলো যদি সঠিক জায়গায় বসানো হত আর কাজ করতো তবে এত প্রাণহানি ঘটতো না।জলসুখা ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক দ্বীন ইসলাম মিয়া বলেন, সরকারি ব্যয়ে এসব যন্ত্র মানুষের জীবন রক্ষার জন্য বসানো হয়েছে। কিন্তু এই যন্ত্রগুলো আদৌ কোন কাজ করে কিনা তা আমরা সাধারণ মানুষ জানিনা।প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, বাজেটেও খরচ হয়, কিন্তু মাঠে কার্যকারিতা নেই। লাইটনিং এরেস্টার ঘিরে যেন উঠেছে সেই প্রশ্ন।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুবোধ মন্ডল বলেন, এগুলো আসলে সচল কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। এ বিষয়ে পরিক্ষা করা ছাড়া বলা সম্ভব না।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, শীঘ্রই হাওড়ে বজ্রপাত নিরোধ শেল্টার সেন্টার নির্মাণ করা হবে।