১০:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করে বহিষ্কার কলাম্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

ডেস্ক নিউজ:
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:৪২:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৬১ বার পড়া হয়েছে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার রায় দিয়েছে লুইজিয়ানার এক অভিবাসন আদালত। আদালতের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে খলিলের উপস্থিতি ‘পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে’। তাই তাকে দেশছাড়া করা যেতে পারে।

বিচারক জ্যামি ই. কোমানস বলেছেন, ‘সরকার পরিষ্কার ও শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানো যাবে।’ খলিলের আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট অবশ্য জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি বলেন, ‘তাই এখনই কিছু হচ্ছে না।’

শুক্রবারের শুনানির শেষে খলিল বলেন, ‘আপনি আগেই বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ন্যায়বিচার ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু আজ যা দেখলাম, এই প্রক্রিয়ার কোথাও এসব ছিল না। ট্রাম্প প্রশাসন এজন্যই আমাকে আমার পরিবার থেকে হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে।’

আইনজীবী ভ্যান ডার হাউট বলেন, ‘আজ আমরা যা দেখলাম, সেটি ছিল ন্যায়বিচারকে তামাশায় পরিণত করার দৃশ্য। তার অধিকার যে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ ছিল এটি। মতপ্রকাশ দমনের উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইনের অপব্যবহার হয়েছে এখানে।’

খলিল একজন বৈধ মার্কিন বাসিন্দা। গত ৮ মার্চ নিউইয়র্কে তার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত অ্যাপার্টমেন্টের লবিতে তাকে আটক করে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তারপর একদিনের মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লুইজিয়ানার জেনা শহরের অভিবাসন ডিটেনশন সেন্টারে। তার স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং তিনি শিগগিরই মা হবেন।

খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, তাকে আটকের সিদ্ধান্ত প্রথম সংশোধনীর অধীনে থাকা বাকস্বাধীনতাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলছেন, পুরোনো আইনের মাধ্যমে খলিলকে তাড়ানোর অধিকার সরকারের আছে। এই আইন অনুযায়ী, যাদের কারণে পররাষ্ট্রনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাদের বহিষ্কার করা যায়।

আদালতে ভ্যান ডার হাউট বলেন, ‘সরকারের যেসব প্রমাণ আদালতে এসেছে, তাতে স্পষ্ট যে এর পেছনে পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং মতপ্রকাশের কারণে তাকে তাড়াতে চায় সরকার।’

খলিল সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া এক ফিলিস্তিনি। তার পরিবার তিবেরিয়াস শহর থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়ার পর সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে গত বছর যেসব ছাত্ররা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেছিল, তাদের মধ্যে খলিল ছিলেন মুখপাত্র ও আলোচক। তিনি কোনো আইন ভাঙেননি এবং ভবনের দখলে জড়িত ছিলেন না।

কিন্তু তার খোলা মুখে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ও নিজের নাম প্রকাশ করায় তাকে অনেকেই হামাসপন্থী ও ইসরায়েলবিরোধী বলেছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘খলিল সন্ত্রাসীদের পক্ষে কথা বলছেন।’ যদিও তারা এই দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির ফেডারেল আদালত সরকারকে বলেছে, আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত খলিলকে বহিষ্কার করা যাবে না।

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তারা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এবং এর মেডিকেল সেন্টার থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান কেটে নিচ্ছে। কারণ তারা মনে করে, ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে।

কিছু ইহুদি ছাত্র ও শিক্ষক বলছেন, আন্দোলনের সময় তারা হয়রানি বা একঘরে হওয়ার শিকার হয়েছেন।

সরকার এর আগেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে যারা ইসরায়েলের সমালোচনা করেছিলেন। একজন অধ্যাপককে তাড়ানো হয়েছে, কারণ তিনি হিজবুল্লাহ নেতার জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করে বহিষ্কার কলাম্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

আপডেট সময়ঃ ০৮:৪২:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার রায় দিয়েছে লুইজিয়ানার এক অভিবাসন আদালত। আদালতের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে খলিলের উপস্থিতি ‘পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে’। তাই তাকে দেশছাড়া করা যেতে পারে।

বিচারক জ্যামি ই. কোমানস বলেছেন, ‘সরকার পরিষ্কার ও শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানো যাবে।’ খলিলের আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হাউট অবশ্য জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি বলেন, ‘তাই এখনই কিছু হচ্ছে না।’

শুক্রবারের শুনানির শেষে খলিল বলেন, ‘আপনি আগেই বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ন্যায়বিচার ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু আজ যা দেখলাম, এই প্রক্রিয়ার কোথাও এসব ছিল না। ট্রাম্প প্রশাসন এজন্যই আমাকে আমার পরিবার থেকে হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে।’

আইনজীবী ভ্যান ডার হাউট বলেন, ‘আজ আমরা যা দেখলাম, সেটি ছিল ন্যায়বিচারকে তামাশায় পরিণত করার দৃশ্য। তার অধিকার যে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ ছিল এটি। মতপ্রকাশ দমনের উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইনের অপব্যবহার হয়েছে এখানে।’

খলিল একজন বৈধ মার্কিন বাসিন্দা। গত ৮ মার্চ নিউইয়র্কে তার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত অ্যাপার্টমেন্টের লবিতে তাকে আটক করে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তারপর একদিনের মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লুইজিয়ানার জেনা শহরের অভিবাসন ডিটেনশন সেন্টারে। তার স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং তিনি শিগগিরই মা হবেন।

খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, তাকে আটকের সিদ্ধান্ত প্রথম সংশোধনীর অধীনে থাকা বাকস্বাধীনতাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলছেন, পুরোনো আইনের মাধ্যমে খলিলকে তাড়ানোর অধিকার সরকারের আছে। এই আইন অনুযায়ী, যাদের কারণে পররাষ্ট্রনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তাদের বহিষ্কার করা যায়।

আদালতে ভ্যান ডার হাউট বলেন, ‘সরকারের যেসব প্রমাণ আদালতে এসেছে, তাতে স্পষ্ট যে এর পেছনে পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং মতপ্রকাশের কারণে তাকে তাড়াতে চায় সরকার।’

খলিল সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া এক ফিলিস্তিনি। তার পরিবার তিবেরিয়াস শহর থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হওয়ার পর সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে গত বছর যেসব ছাত্ররা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেছিল, তাদের মধ্যে খলিল ছিলেন মুখপাত্র ও আলোচক। তিনি কোনো আইন ভাঙেননি এবং ভবনের দখলে জড়িত ছিলেন না।

কিন্তু তার খোলা মুখে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ও নিজের নাম প্রকাশ করায় তাকে অনেকেই হামাসপন্থী ও ইসরায়েলবিরোধী বলেছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘খলিল সন্ত্রাসীদের পক্ষে কথা বলছেন।’ যদিও তারা এই দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সির ফেডারেল আদালত সরকারকে বলেছে, আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত খলিলকে বহিষ্কার করা যাবে না।

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তারা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এবং এর মেডিকেল সেন্টার থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান কেটে নিচ্ছে। কারণ তারা মনে করে, ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যর্থ হয়েছে।

কিছু ইহুদি ছাত্র ও শিক্ষক বলছেন, আন্দোলনের সময় তারা হয়রানি বা একঘরে হওয়ার শিকার হয়েছেন।

সরকার এর আগেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে যারা ইসরায়েলের সমালোচনা করেছিলেন। একজন অধ্যাপককে তাড়ানো হয়েছে, কারণ তিনি হিজবুল্লাহ নেতার জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন