০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

সিলেটে বেড়েছে অপরাধ : অপরাধী সন্দেহে নির্যাতিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময়ঃ ১১:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • / ৫৯ বার পড়া হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে সিলেটজুড়ে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি সহ অপরাধ কর্মকান্ড। বিশেষ করে রাত হলেই ডাকাত আতঙ্কে থাকেন মানুষেরা। কখন কোথায় ডাকাতরা হানা দিচ্ছে বলা মুসকিল। অনেক এলাকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন মানুষজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা একসাথে বা বাসাতে থাকে না। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। সন্ধ্যা নামলেই একত্রিত হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে বের হয় ডাকাতি করতে। টার্গেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা।

বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক বেশি দেখা যায়। তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কয়েকটি স্থানে ডাকাত সন্দেহে আটকও করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।

এদিকে, ডাকাতি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনকে তৎপর দেখা গেলেও জনসাধারণের মনে আস্তা ফিরছে না। ফলে অপরিচিত কাউকে দেখলেই স্থানীয়রা আটক করে মারধরের ঘটনা ঘটছে। এতে করে অনেক ভালো মানুষও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে সিলেটের বিশ্বনাথে। উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের রাজাগঞ্জ বাজারের পাশে সরকারি গুচ্ছ গ্রামে মসজিদের ইমামের মোবাইল চুরি সন্দেহে যুবকের উপর অমানবিক নির্যাতন করে চোখ উপড়ে ও ডান পা ভেঙ্গে দিয়েছে গ্রামের লোকজন।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারি মৃত সাজিদ আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ (৪০) কে চোর সন্দেহে তার বসত ঘরে প্রবেশ করে মারধরের মাধ্যমে ডানের চোখ উপড়ে ও ডান পা ভেঙ্গে দেয় স্থানীয় জনতা। এছাড়াও তার বসতঘর ভাংচুর করে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মারধরের পর তাকে একই উপজেলার রহিমপুর গ্রামের কয়েছ মিয়ার বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে রাতে কয়েছ মিয়ার বসত ঘর থকে গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুল আহাদকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেছে থানা পুলিশ। এঘটনায় বুধবার (১৯ মার্চ) আহত আব্দুল আহাদের স্ত্রী রহিমা বেগম (৩০) বাদী হয়ে ৭ জনের নামে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-(১৩)।

এর আগে গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার রাতে একই উপজেলায় ডাকাত অপবাদ দিয়ে লন্ডন প্রবাসী দম্পতির ওপর অমানবিক হামলা করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনই। ভাংচুর করা হয়েছে তাদের প্রাইভেটকার।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার রামপাশা বাজারে এ ঘটনাটি ঘটেছে। হামলার শিকার ওই লন্ডন প্রবাসী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংরাওলী গ্রামের আরশ আলীর ছেলে আশরাফ আলী (৩৯) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৬)। হামলায় তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়ে আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর জানা যায়, তাদের ওপর এই হামলা করেছেন প্রবাসী আশরাফ আলীর তালাক প্রাপ্ত প্রথম স্ত্রী ও শ্যালকসহ ৬/৭ জন। প্রথমে সিলেট জিন্দাবাজারে হামলা করেন। সেখান থেকে নিজের প্রাইভেটকারে করে প্রবাসী স্বামী-স্ত্রী বিশ্বনাথে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। এসময় মোটরসাইকেল যোগে আবারও পিছু নেয় হামলাকারীরা। রামপাশা বাজারে পৌঁছালে ডাকাত বলে ওই প্রবাসী দম্পতির গাড়ির গতিরোধ করে ফের হামলা চালানো হয়। আর এই হামলায় তারা স্বামী স্ত্রী দুজন আহত ও তাদের প্রাইভেটকার ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই প্রবাসী দম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ ঘটনায় লন্ডন প্রবাসী আশরাফ আলী বাদী হয়ে চারজনের নামে বিশ্বনাথ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এছাড়াও গত ১০ মার্চ সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন জালালপুর ইউনিয়নের সমসপুর গ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ডাকাত সন্দেহে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে জানা যায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল মিয়া। তার বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কঠালপুরে। তিনি ওই গ্রামে তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে রাস্তায় হাটাহাটি করছিলেন দেখে এলাকার কয়েকজন যুবকের সন্দেহ হলে মানসিক ভারসাম্যহীন ফয়সাল মিয়াকে জিজ্ঞাবাদ শুরু করলে এলোমেলো কথাবার্তা বলেন প্রতিবন্ধী ফয়সাল মিয়া। তৎক্ষণাৎ আরো কয়েকজন সাধারণ মানুষ উপস্থিত হলে শুরু হয় জটিলতা, এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে চোর ডুকেছে সমসপুরে। এবং ঘটনাস্থলে শত শত মানুষ উপস্থিত হন। অবশেষে ফয়সাল মিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ হলে এলাকার মুরুব্বিদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়।

এসব বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রফিকুল ইসলামের সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগসঃ

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সিলেটে বেড়েছে অপরাধ : অপরাধী সন্দেহে নির্যাতিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ

আপডেট সময়ঃ ১১:৪৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

সাম্প্রতিককালে সিলেটজুড়ে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি সহ অপরাধ কর্মকান্ড। বিশেষ করে রাত হলেই ডাকাত আতঙ্কে থাকেন মানুষেরা। কখন কোথায় ডাকাতরা হানা দিচ্ছে বলা মুসকিল। অনেক এলাকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন মানুষজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা একসাথে বা বাসাতে থাকে না। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। সন্ধ্যা নামলেই একত্রিত হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে বের হয় ডাকাতি করতে। টার্গেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা।

বিশ্বনাথ, গোলাপগঞ্জ এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক বেশি দেখা যায়। তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কয়েকটি স্থানে ডাকাত সন্দেহে আটকও করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।

এদিকে, ডাকাতি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনকে তৎপর দেখা গেলেও জনসাধারণের মনে আস্তা ফিরছে না। ফলে অপরিচিত কাউকে দেখলেই স্থানীয়রা আটক করে মারধরের ঘটনা ঘটছে। এতে করে অনেক ভালো মানুষও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে সিলেটের বিশ্বনাথে। উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের রাজাগঞ্জ বাজারের পাশে সরকারি গুচ্ছ গ্রামে মসজিদের ইমামের মোবাইল চুরি সন্দেহে যুবকের উপর অমানবিক নির্যাতন করে চোখ উপড়ে ও ডান পা ভেঙ্গে দিয়েছে গ্রামের লোকজন।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারি মৃত সাজিদ আলীর ছেলে আব্দুল আহাদ (৪০) কে চোর সন্দেহে তার বসত ঘরে প্রবেশ করে মারধরের মাধ্যমে ডানের চোখ উপড়ে ও ডান পা ভেঙ্গে দেয় স্থানীয় জনতা। এছাড়াও তার বসতঘর ভাংচুর করে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মারধরের পর তাকে একই উপজেলার রহিমপুর গ্রামের কয়েছ মিয়ার বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে রাতে কয়েছ মিয়ার বসত ঘর থকে গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুল আহাদকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেছে থানা পুলিশ। এঘটনায় বুধবার (১৯ মার্চ) আহত আব্দুল আহাদের স্ত্রী রহিমা বেগম (৩০) বাদী হয়ে ৭ জনের নামে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-(১৩)।

এর আগে গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার রাতে একই উপজেলায় ডাকাত অপবাদ দিয়ে লন্ডন প্রবাসী দম্পতির ওপর অমানবিক হামলা করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনই। ভাংচুর করা হয়েছে তাদের প্রাইভেটকার।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার রামপাশা বাজারে এ ঘটনাটি ঘটেছে। হামলার শিকার ওই লন্ডন প্রবাসী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংরাওলী গ্রামের আরশ আলীর ছেলে আশরাফ আলী (৩৯) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৬)। হামলায় তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়ে আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর জানা যায়, তাদের ওপর এই হামলা করেছেন প্রবাসী আশরাফ আলীর তালাক প্রাপ্ত প্রথম স্ত্রী ও শ্যালকসহ ৬/৭ জন। প্রথমে সিলেট জিন্দাবাজারে হামলা করেন। সেখান থেকে নিজের প্রাইভেটকারে করে প্রবাসী স্বামী-স্ত্রী বিশ্বনাথে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। এসময় মোটরসাইকেল যোগে আবারও পিছু নেয় হামলাকারীরা। রামপাশা বাজারে পৌঁছালে ডাকাত বলে ওই প্রবাসী দম্পতির গাড়ির গতিরোধ করে ফের হামলা চালানো হয়। আর এই হামলায় তারা স্বামী স্ত্রী দুজন আহত ও তাদের প্রাইভেটকার ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই প্রবাসী দম্পতিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ ঘটনায় লন্ডন প্রবাসী আশরাফ আলী বাদী হয়ে চারজনের নামে বিশ্বনাথ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এছাড়াও গত ১০ মার্চ সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন জালালপুর ইউনিয়নের সমসপুর গ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ডাকাত সন্দেহে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে জানা যায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল মিয়া। তার বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কঠালপুরে। তিনি ওই গ্রামে তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে রাস্তায় হাটাহাটি করছিলেন দেখে এলাকার কয়েকজন যুবকের সন্দেহ হলে মানসিক ভারসাম্যহীন ফয়সাল মিয়াকে জিজ্ঞাবাদ শুরু করলে এলোমেলো কথাবার্তা বলেন প্রতিবন্ধী ফয়সাল মিয়া। তৎক্ষণাৎ আরো কয়েকজন সাধারণ মানুষ উপস্থিত হলে শুরু হয় জটিলতা, এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে চোর ডুকেছে সমসপুরে। এবং ঘটনাস্থলে শত শত মানুষ উপস্থিত হন। অবশেষে ফয়সাল মিয়ার পরিবারের সাথে যোগাযোগ হলে এলাকার মুরুব্বিদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়।

এসব বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রফিকুল ইসলামের সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

নিউজটি শেয়ার করুন