তফসিলের আগেই নতুন ডিসি এসপিদের পদায়ন

- আপডেট সময়ঃ ০৬:৪৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / ১২ বার পড়া হয়েছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এমনটি বিবেচনায় নিয়ে মাঠ প্রশাসন নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সময়ে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি ও ইউএনও পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সৎ, যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে। একটি বিতর্কহীন তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে ডিসি ও এসপি পদে প্রাধান্য পাচ্ছেন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামী ডিসেম্বরে। তফসিলের আগেই নতুন ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের পদায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনের জেলা প্রশাসক পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডিসিরাই ভোটের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তাই দল নিরপেক্ষ বর্তমান সরকার ডিসি পদে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে চাচ্ছে। সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে। তফসিলের আগে অক্টোবর ও নভেম্বরের মধ্যেই মাঠ প্রশাসনে রদবদল শেষ করতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে ডিসি, এসপি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তালিকা তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ বিভিন্ন তথ্য নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। বিশেষ করে ডিসি পদায়নের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়েছে সতর্কতার সঙ্গে। এর আগে ডিসি নিয়োগ নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠায় এবার ডিসি পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির সাক্ষাৎকার দীর্ঘ সময় ধরে নেওয়া হয়েছে।
গত ২০ মার্চ ১৯৬ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। তাদের মধ্যে ২১ জন ডিসি ছিলেন। কিন্তু যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ডিসিদের এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।
সূত্র জানায়, এই ২১ ডিসি ও ২৪তম বিসিএস ব্যাচের পাঁচ ডিসিকে পদ থেকে প্রত্যাহার করতে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হলে এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত দেয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সামনে নির্বাচন তাই একসঙ্গে সবাইকে প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামীতে মাঠ প্রশাসনে ডিসিদের উঠিয়ে আনা এবং নতুন ডিসি পদায়নের ক্ষেত্রে নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রধান করে গত ৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি করে সরকার। এ কমিটির সুপারিশের আলোকে মাঠ প্রশাসনে পদে রদবদল করা হবে।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৩৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়েছে। ফলে এবার অনেক কর্মকর্তাই নির্বাচনকালীন ডিসি-এসপি হতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এ কারণে নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগ দিতে তাদের ফিটলিস্টও তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনের সব পদায়ন-বদলির একক এখতিয়ার থাকবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। এ কারণে তফসিলের আগেই পদায়ন শেষ করবে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ডিসি পদে কর্মরত আছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪, ২৫ এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের সময় ডিসি পদে দায়িত্বে থাকবেন ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। কারণ ২০০৪ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়া ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর। আর ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্ব পালন করছেন ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সংসদ নির্বাচনে বিগত তত্ত্বাবধায়ক ও বিএনপি সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তাকে মাঠে রাখতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে সৎ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হবে। এবার বিতর্কহীন তালিকা তৈরির সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে।